হযরত হূদ (আ)

ভূমিকা

মহান আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার মানুষের হিদায়াতের জন্য অগণিত নবী-রাসূল প্রেরণ করিয়াছেন। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি হযরত হূদ (আ)-কে তাঁহার নিজের কাওম আদ-এর প্রতি নবী হিসাবে প্রেরণ করেন। পবিত্র কুরআনে এই সম্পর্কে বলা হইয়াছে : ১১৪ ১৫ ১, “আদ সম্প্রদায়ের নিকট উহাদিগের ভ্রাতা হূদকে পাঠাইয়াছিলাম” (১১ : ৫০)। হযরত হূদ (আ) হযরত নূহ (আ)-এর পর নবী হিসাবে আসিয়াছিলেন। হযরত আদম (আ) হইতে হযরত নূহ (আ)-এর পূর্ব পর্যন্ত প্রেরিত নবীগণের সময় শরীআতের বিস্তারিত নির্দেশাবলী নাযিল হয় নাই। ঐ পর্যায়ের নবীগণ মুখ্যত মানুষকে তাওহীদের শিক্ষা দিতেন। হযরত নূহ (আ) হইতে নবুওয়াত ও রিসালাতের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়। হযরত নূহ (আ)-এর সময়ে শরীআতের নির্দেশাবলী অবতীর্ণ হইলেও জিহাদের নির্দেশ অবতীর্ণ হয় নাই। জিহাদের বিধান হযরত মূসা (আ)-এর সময় হইতে কার্যকর হয়। জিহাদের নির্দেশের পূর্বে কোন কাওমের নিকট প্রেরিত নবী-রাসূলের বিরোধিতাকারী ঐ কাওমের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট নবী অথবা তাঁহার অনুসারীগণের পক্ষে জিহাদের কোন অবকাশ ছিল না। আল্লাহ তাআলা ঐসব নাফরমান কাওমকে দুনিয়াবী আযাব ও গযব দিয়া ধ্বংস করিয়া দিতেন। আল্লাহ হযরত হূদ (আ)-এর কাওমকেও তাহাদের নাফরমানীর কারণে আযাব প্রেরণ করিয়া ধ্বংস করিয়া দেন।

হযরত হূদ (আ)-এর জন্ম

তাওরাতে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, এবর (হদ) যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখন তাঁহার পিতা শেলহ-এর বয়স ছিল ৩০ বৎসর। হযরত হূদ (আ)-এর মোট বয়স ছিল ৪৬৪ বৎসর (বাইবেল, আদিপুস্তক ১১ ও ১৫; আম্বিয়ায়ে কুরআন, খ. ১, পৃ. ১২৩)।

বাইবেলের বর্ণনায় যাঁহাকে এবর বলা হইয়াছে তিনিই হযরত হূদ (আ)। উক্ত বর্ণনার আলোকে তাঁহার বয়সও নির্ধারণ করা যায়। যেমন এবর (হূদ) ৩৪ বৎসর বয়সে পেলগের জন্ম দেওয়ার পর আরও ৪৩০ বৎসর জীবিত ছিলেন। তাই তাঁহার মোট বয়স ছিল ৪৬৪ বৎসর।

হযরত হূদ (আ)-এর বংশ ও জন্ম সম্পর্কিত কিছু তথ্য ছাড়া বাইবেলের আদিপুস্তক হইতে আর কোন বিবরণ পাওয়া যায় না। এই সম্পর্কে মুহাম্মাদ জামীল আহমাদ বলেন, “হযরত হূদ (আ)-এর নবুওয়াতের তথ্য ও তাঁহার ওয়াজ-নসীহত, দাওয়াত ও তাবলীগ, তাঁহার কাওমের নাফরমানী ও বিদ্রোহ এবং সর্বশেষ তাহাদের ধ্বংস সম্পর্কিত ঘটনা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হইয়াছে। তাওরাত এই সম্পর্কে নীরব” (আম্বিয়ায়ে কুরআন, খ.১, পৃ. ১২৪)।

হযরত হূদ (আ)-এর বংশপরিচয়

হৃদ ইব্‌ন আবদুল্লাহ ইবন বিবাহ ইব্‌ন খাদ ইব্‌ন ‘আদ ইবন আওস ইব্‌ন ইরাম ইব্‌ন সাম ইব্‌ন নূহ (আ)। ৪র্থ পুরুষে তাঁহার পরদাদা ‘আদ ইবন আওস-এর নামযুক্ত যে পোত্র ছিল, সেই গোত্রের সঙ্গে তিনি সম্পর্কিত ছিলেন। তাঁহার বংশলতিকা সাম ইবুন নূহ (আ) পর্যন্ত যাইয়া-হযরত ইবরাহীম (আ)-এর বংশের সহিত মিলিয়া যায়। হযরত হূদ (আ) ও সাম-এর মধ্যে ৬ পুরুষের ব্যবধান বিদ্যমান (গুলাম নবী, মুকান্মাল কাসাসুল কুরআন, ১খ, পৃ. ৭৫)। মুহাম্মাদ জামীল আহমাদ রচিত আম্বিয়ায়ে কুরআন নামক গ্রন্থে হযরত হূদ (আ)-এর বংশলতিকা নিম্নোক্তরূপে দেখানো হইয়াছে :

Noah

Shem

Arpachshad

Arphaxad

Salah

Eber

উপরিউক্ত বংশলতিকায় হযরত হূদ (আ)-কে ইবার (-) বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে। তাওরাতের বর্ণনা অনুযায়ী হূদ (আ) হযরত আদম (আ)-এর ১৪তম অধস্তন এবং হযরত নূহ (আ)-এর ৫ম অধস্তন পুরুষ (আম্বিয়ায়ে কুরআন, খ. ১, পৃ. ১২৩; বাইবেল, আদিপুস্তক, পৃ. ১৩)।

ইব্‌ন কাছীর রচিত কাসাসুল আম্বিয়া গ্রন্থে হযরত হূদ (আ)-এর বংশলতিকা নিম্নেক্তরূপে উল্লেখ করা হইয়াছে : হূদ ইবন শালিখ ইব্‌ন আরফাখশায ইবন সাম ইবুন নূহ (আ)। কেহ বলেন, হযরত হূদ (আ) হইলেন আবির ইবন শালিক ইবন আরফাখশায ইবন সাম ইব্‌ন নূহ (আ) অথবা কেহ বলেন, হূদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন বিরাহ ইবন আল-জারূদ ইবন ‘আদ ইবন আওস ইবন ইরাম ইব্‌ন সাম ইবন নূহ (আ) (এই বংশলতিকাটি ইব্‌ন জারীর উল্লেখ করেন; ইবন কাছীর, কাসাসুল আম্বিয়া, ১খ., পৃ. ৯৫, বৈরূত ১৯৮৫ খৃ.)। হযরত হূদ (আ) আদ জাতির সর্বাধিক অভিজাত শাখা খাদ বংশে জন্মগ্রহণ করেন (আয়নী, ৭ খ., কিতাবুল আম্বিয়া, উদ্ধৃতিসহ কাসাসুল কুরআন, ১খ., পৃ. ৮৯, বৈরূত ১৯৮৫ খৃ.)। হযরত হূদ (আ) আরব বংশীয় ছিলেন। এই মর্মে এক হাদীছে ইহার প্রমাণ পাওয়া যায় । সহীহ ইবন হিব্বান-এ হযরত আবু যার (রা) কর্তৃক বর্ণিত আম্বিয়া-ই কিরামের বর্ণনা সম্বলিত দীর্ঘ হাদীছের এক স্থানে রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেন ।

“আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত নবী-রাসূলগণের মধ্যে ৪জন আরব ছিলেন : হযরত হূদ (আ), হযরত সালিহ্ (আ), হযরত আয়ব (আ) এবং তোমার নবী হে আবু যার অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ (স)” (ইব্‌ন কাছীর, কাসাসুল আম্বিয়া, ১খ., পৃ. ৯৫)।

হযরত হূদ (আ)-এর বংশলতিকার একটি তুলনামূলক চিত্র বিখ্যাত মিসরীয় ঐতিহাসিক আবদুল ওয়াহহাব আন্-নাজ্জার তাঁহার রচিত কাসাসুল আম্বিয়া গ্রন্থে তুলিয়া ধরেন :

হযরত নূহ (আ)

  • (সাম)
    • (আরফাখশীয়)
      • (শালিহ)
      • (আবির)
      • (ফালিজ)
      • (রাউ)
      • (সারূয)
      • (নাহূর)
      • (তারিহ)
      • হযরত ইবরাহীম (আ)
    • (আরাম)
      • (আওস)
      • (আদ)
      • (আল-খালূদ)
      • (রিবাহ)
      • (আবদুল্লাহ্)
      • (হযরত হূদ (আ)

এই বংশলতিকার স্তম্ভে দৃষ্ট হয় যে, হযরত হূদ (আ) সাম-এর ৬ষ্ঠ অধস্তন পুরুষ, পক্ষান্তরে হযরত ইবরাহীম (আ) সাম-এর ৮ম অধস্তন পুরুষ (আবদুল ওয়াহহাব আন-নাজ্জার, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ৫০)।

আরব বংশ বিশেষজ্ঞ আবুল বারাকাত জাওফী লিখেন, হূদ (আ)-এর পুত্র ইয়ারুব ইব্‌ন কাহতান পরবর্তী কালে য়ামানে পৌঁছিয়া বসতি স্থাপন করেন। য়ামানের সকল সম্প্রদায়ই তাহার বংশধর। আরবী ভাষার সূচনা তাঁহার নিকট হইতেই হইয়াছে এবং তাহার নাম অনুসারে ভাষার নাম আরবী ও এই ভাষাভাষীর নাম হইয়াছে আরব (বাহরে মুহীত; মুফতী মুহাম্মাদ শফী, মাআরিফুল কুরআন, সংক্ষিপ্ত বাংলা সংস্করণ, পৃ. ৪৫৪)। কিন্তু আরেকটি তথ্য এই যে, আরবী ভাষা হযরত নূহ (আ)-এর আমল হইতে প্রচলিত ছিল। নূহ (আ)-এর কিশতীর একজন আরোহী জ্বরহুম নামক ব্যক্তি আরবী ভাষায় কথা বলিতেন। এই জ্বরহুম হইতেই মক্কা শহর আবাদ হইয়াছে। তবে ইহা সম্ভব যে, য়ামানে আরবী ভাষার সূচনা ইয়াকূব ইবন কাহ্তান হইতেই হইয়াছিল (মুফতী মুহাম্মাদ শফী, মাআরিফুল কুরআন, সংক্ষিপ্ত বাংলা সংস্করণ, পৃ. ৪৫৪)।

ইবন আসাকির তাঁহার ইতিহাস গ্রন্থে এই মর্মে আনাস ইবন মালিক (রা) হইতে একটি মওকুফ হাদীছ বর্ণনা করিয়াছেন। হযরত আনাস (রা) বলেন, যখন আল্লাহ মানবজাতিকে বাবিল-এ একত্র করিলেন, তখন তাহাদের উপর দিয়া আল্লাহর হুকুমে জোরে হাওয়া প্রবাহিত হইল। তাহারা তাহাদের একত্র করার কারণ জানার জন্য এক স্থানে জড় হইল। তখন এক (অদৃশ্য) ঘোষণাকারী ঘোষণা করিলেন, “তোমাদের মধ্যে যাহারা পশ্চিমকে ডাইনে, পূর্বকে বামে রাখিবে এবং পবিত্র ঘরের দিকে মুখ করিবে তাহাদের ভাষা হইবে আকাশের বাসিন্দাদের ভাষা”। তখন কাহতানের পুত্র য়ারুব দাঁড়ান। তাহাকে সম্বোধন করিয়া বলা হয়, “হে হ্রদের পুত্র আরুব ইব্‌ন কাহতান! তুমি কি সেই ব্যক্তি?” অতঃপর তিনি হইলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি “প্রাঞ্জল আরবীতে কথা বলেন। অতঃপর একের পর এক ঘোষণা হইতে লাগিল আর লোকেরা দাঁড়াইয়া নিজেদের সম্মতি জানাইতে থাকিল । এইভাবে মানবজাতির ভাষা বাহাত্তরটি ভাষায় বিভক্ত হইল, তখন ঘোষণা বন্ধ হইল। আর পরিণতিতে কাহারও ভাষা কেহই বুঝিতে সক্ষম না হওয়ায় তাহারা যাহার যাহার নির্ধারিত এলাকায় প্রস্থান করিল। সেই কারণেই এই দেশের নাম হয় বাবিল (আ.ত.ম. মুছলেহ উদ্দীন, আরবী সাহিত্যের ইতিহাস, পৃ. ২৩২, ঢাকা ১৯৮২ খৃ.; নতুন সংস্করণ ১৯৯৫ খৃ.)।

হযরত হূদ (আ)-এর নবুওয়াত লাভ

হযরত হূদ (আ) তাঁহার নিজ কওম ‘আদ-এর প্রতি নবী হিসাবে প্রেরিত হন। আদ হযরত নূহ (আ)-এর ৫ম পুরুষের মধ্যে এবং তাঁহার পুত্র সাম-এর বংশধরের মধ্যে এক ব্যক্তির নাম। পরবর্তী পর্যায়ে আদ নামক ব্যক্তির বংশধর ও গোটা সম্প্রদায় আদ নামে খ্যাত হয়। বংশবৃদ্ধির ফলে আদ একটি জাতিতে পরিণত হয়। আদ জাতির লোকেরা ছিল সুঠামদেহী ও দীর্ঘ আকৃতিবিশিষ্ট। তাহারা প্রচণ্ড কায়িক শক্তির অধিকারী ছিল। তাহা ছাড়া আর্থিক দিক হইতেও তাহারা অত্যন্ত সমৃদ্ধিশালী ছিল। ‘আদ জাতি তাহাদের সুখ-সমৃদ্ধি ও শক্তিমত্তায় গর্বিত হইয়া আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হয়। ফলে তাহাদের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ হযরত হূদ (আ)-কে নবীরূপে প্রেরণ করেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ১৯৭৫ ১৬ ১, “আদ সম্প্রদায়ের নিকট উহাদিগের ভ্রাতা হূদকে পাঠাইয়াছিলাম”।

আল-কুরআনে হ্যরত হূদ (আ)

পবিত্র কুরআনের ১০টি সূরায় হযরত হূদ (আ) ও তাহার রিসালাত সংক্রান্ত আলোচনা এবং তাঁহার কওম অর্থাৎ কওমে আদ-এর কথা বর্ণনা করা হইয়াছে। নিম্নে সূরাসমূহের নাম ও আয়াত নম্বর উল্লেখ করা হইল :

সূরা আল-আরাফ : আয়াত নম্বর ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২।

সূরা হূদ : আয়াত নম্বর ৫০, ৫১,৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯, ৬০।

সূরা আল-মুমিনূন : ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২।

সূরা আস-শুআরা : আয়াত নম্বর : ১২৩, ১২৪, ১২৫, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১২৯, ১৩০, ১৩১, ১৩২, ১৩৩, ১৩৪, ১৩৫, ১৩৬, ১৩৭, ১৩৮, ১৩৯, ১৪০।

সূরা হা-মীম আস-সাজদা : আয়াত নম্বর ১৫, ১৬।

সূরা আয-যারিয়াত : ৪১-৪২।

সূরা আল-আহকাফ : আয়াত নম্বর ২১-২৬।

সূরা আল-কামার : আয়াত নম্বর ১৮, ১৯, ২০, ২১।

সূরা আল-হাক্কা : আয়াত নম্বর ৬, ৭, ৮।

সূরা আল-ফাজুর : আয়াত নম্বর ৬, ৭, ৮ (আবদুল ওয়াহহাব আন-নাজ্জার, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ৫৩-৫৬)। আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আদ জাতির নিকট আমি উহাদিগের ভ্রাতা হ্রদকে পাঠাইয়াছিলাম। সে বলিয়াছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নাই। তোমরা কি সাবধান হইবে না? তাহার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ, যাহারা কুফরী করিয়াছিল, তাহারা বলিয়াছিল, আমরা তো দেখিতেছি তুমি নির্বোধ এবং তোমাকে আমরা তো মিথ্যাবাদী মনে করি। সে বলিল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি নিবোধ নহি, বরং আমি জগৎসমূহের প্রতিপালকের রাসূল। আমি আমার প্রতিপালকের বাণী তোমাদিগের নিকট পৌঁছাইতেছি এবং আমি তোমাদিগের একজন বিশ্বস্ত হিতাকাঙখী। তোমরা কি বিস্মিত হইতেছ যে, তোমাদিগের নিকট তোমাদিগের একজনের মাধ্যমে তোমাদিগের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদিগকে সতর্ক করিবার জন্য উপদেশ আসিয়াছে? এবং স্মরণ কর, আল্লাহ তোমাদিগকে নূহের সম্প্রদায়ের পরে তাহাদিগের স্থলাভিষিক্ত করিয়াছেন এবং তোমাদিগের অবয়ব অন্য লোক অপেক্ষা শক্তিতে অধিকতর সমৃদ্ধ করিয়াছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, হয়ত তোমরা সফলকাম হইবে। তাহারা বলিল, তুমি কি আমাদিগের নিকট এই উদ্দেশ্যে আসিয়াছ যে, আমরা যেন এক আল্লাহর ইবাদত করি এবং আমাদিগের পূর্বপুরুষগণ যাহার ইবাদত করিত তাহা বর্জন করি? সুতরাং তুমি সত্যবাদী হইলে আমাদিগকে যাহার ভয় দেখাইতেছ তাহা আনয়ন কর। সে বলিল, তোমাদিগের প্রতিপালকের শাস্তি ও ক্রোধ তো তোমাদিগের জন্য নির্ধারিত হইয়াই আছে; তবে কি তোমরা আমার সহিত বিতর্কে লিপ্ত হইতে চাহ এমন কতগুলি নাম সম্বন্ধে যাহা তোমরা ও তোমাদিগের পিতৃপুরুষগণ সৃষ্টি করিয়াছ এবং যে সম্বন্ধে আল্লাহ কোন সনদ পাঠান নাই? সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদিগের সহিত প্রতীক্ষা করিতেছি। অতঃপর তাহাকে ও তার সঙ্গীদিগকে আমার অনুগ্রহে উদ্ধার করিয়াছিলাম; আর আমার নিদর্শনকে যাহারা প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল এবং যাহারা মুমিন ছিল না তাহাদিগকে নির্মূল করিয়াছিলাম” (৭ : ৬৫-৭২)।

“আমি আদ জাতির নিকট উহাদিগের ভ্রাতা হ্রদকে পাঠাইয়াছিলাম। সে বলিয়াছিল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য কোন ইলাহ নাই। তোমরা তো কেবল মিথ্যা রচনাকারী। হে আমার সম্প্রদায়! আমি ইহার পরিবর্তে তোমাদিগের নিকট পরিশ্রমিক যাজ্ঞা করি না। আমার পারিশ্রমিক আছে তাহারই নিকট যিনি আমাকে সৃষ্টি করিয়াছেন। তোমরা কি তবুও অনুধাবন করিবে না? হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদিগের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাহার দিকেই ফিরিয়া আস। তিনি তোমাদিগের জন্য প্রচুর বারি বর্ষাইবেন। তিনি তোমাদিগকে আরও শক্তি দিয়া তোমাদিগের শক্তি বৃদ্ধি করিবেন এবং তোমরা অপরাধী হইয়া মুখ ফিরাইয়া লইও না। উহারা বলিল, হে হূদ! তুমি আমাদিগের নিকট কোন স্পষ্ট প্রমাণ আনয়ন কর নাই, তোমার কথায় আমরা আমাদিগের ইলাহূদিগকে পরিত্যাগ করিবার নহি এবং আমরা তোমাতে বিশ্বাসী নহি। আমরা তো ইহাই বলি, আমাদিগের ইলাদিগের মধ্যে কেহ তোমাকে অশুভ দ্বারা আবিষ্ট করিয়াছে। সে বলিল, আমি আল্লাহকে সাক্ষী করিতেছি এবং তোমরাও সাক্ষী হও যে, আমি তাহা হইতে নির্লিপ্ত যাহাকে তোমরা আল্লাহর শরীক কর, আল্লাহ ব্যতীত। তোমরা সকলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর, অতঃপর আমাকে অবকাশ দিও না। আমি নির্ভর করি আমার ও তোমাদিগের প্রতিপালক আল্লাহর উপর; এমন কোন জীব-জন্তু নাই, যে তাহার পূর্ণ আয়ত্তাধীন নহে; নিশ্চয় আমার প্রতিপালক আছেন সরল পথে। অতঃপর তোমরা মুখ ফিরাইয়া লইলেও আমি যাহাসহ তোমাদিগের নিকট প্রেরিত হইয়াছি, আমি তো তাহা তোমাদিগের নিকট পৌঁছাইয়া দিয়াছি এবং আমার প্রতিপালক তোমাদিগ হইতে ভিন্ন কোন সম্প্রদায়কে তোমাদিগের স্থলাভিষিক্ত করিবেন এবং তোমরা তাহার কোন ক্ষতি সাধন করিতে পারিবে না। নিশ্চয় আমার প্রতিপালক সমস্ত কিছুর রক্ষণাবেক্ষণ করেন। এবং যখন আমার নির্দেশ আসিল তখন আমি হূদ ও তাহার সঙ্গে যাহারা ঈমান আনিয়াছিল তাহাদিগকে আমার অনুগ্রহে রক্ষা করিলাম এবং রক্ষা করিলাম তাহাদিগকে কঠিন শাস্তি হইতে। এই আদ জাতি তাহাদিগের প্রতিপালকের নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করিয়াছিল এবং অমান্য করিয়াছিল তাহার রাসূলগণকে এবং উহারা প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারীর নির্দেশ অনুসরণ করিত। এই দুনিয়ায় উহাদিগকে করা হইয়াছিল লানতগ্রস্ত এবং লানতগ্রস্ত হইবে উহারা কিয়ামতের দিনেও। জানিয়া রাখ! আদ সম্প্রদায় তাহাদিগের প্রতিপালককে অস্বীকার করিয়াছিল। জানিয়া রাখ! ধ্বংসই হইল হৃদের সম্প্রদায় আদের পরিণাম” (১১ : ৫০-৬০)।

“অতঃপর আমি তাহাদিগের পর অন্য এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করিয়াছিলাম এবং উহাদিগেরই . একজনকে উহাদিগের নিকট রাসূল করিয়া পাঠাইয়াছিলাম। সে বলিয়াছিল, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদিগের অন্য কোন ইলাহ নাই। তবুও কি তোমরা সাবধান হইবে না? তাহার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ, যাহারা কুফরী করিয়াছিল ও আখিরাতের সাক্ষাৎকারকে অস্বীকার করিয়াছিল এবং যাহাদিগকে আমি দিয়াছিলাম পার্থিব জীবনে প্রচুর ভোগসম্ভার, তাহারা বলিয়াছিল, সে তো তোমাদিগের মত একজন মানুষই; তোমরা যাহা আহার কর সে তো তাহাই আহার করে এবং তোমরা যাহা পান কর সেও তাহাই পান করে। যদি তোমরা তোমাদিগের মত একজন মানুষের আনুগত্য কর তবে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। সে কি তোমাদিগকে এই প্রতিশ্রুতিই দেয় যে, তোমাদিগের মৃত্যু হইলে এবং তোমরা মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হইলেও তোমাদিগকে পুনরুত্থিত করা হইবে? অসম্ভব, তোমাদিগকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হইয়াছে তাহা অসম্ভব। একমাত্র পার্থিব জীনই আমাদিগের জীবন, আমরা মরি-বাঁচি এইখানেই এবং আমরা পুনরুথিত হইব না। সে তো এমন এক ব্যক্তি যে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করিয়াছে এবং আমরা তাহাকে বিশ্বাস করিবার নহি। সে বলিল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য কর; কারণ উহারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে। আল্লাহ বলিলেন, অচিরে উহারা অনুতপ্ত হইবেই। অতঃপর সত্যসত্যই এক বিকট আওয়াজ উহাদিগকে আঘাত করিল এবং আমি উহাদিগকে তরঙ্গ-তাড়িত আবর্জনা সদৃশ করিয়া দিলাম। সুতরাং ধ্বংস হইয়া গেল জালিম সম্প্রদায়। অতঃপর তাহাদিগের পরে আমি বহু জাতি সৃষ্টি করিয়াছি” (২৩:৩১-৪২)।

“আদ সম্প্রদায় রাসূলগণকে অস্বীকার করিয়াছিল। যখন উহাদিগের ভ্রাতা হ্রদ উহাদিগকে বলিল, তোমরা কি সাবধান হইবে না? আমি তোমাদিগের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আমি তোমাদিগের নিকট ইহার জন্য কোন প্রতিদান চাহি না, আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আছে। তোমরা কি প্রতিটি উচ্চ স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করিতেছ নিরর্থক? আর তোমরা প্রাসাদ নির্মাণ করিতেছ এই মনে করিয়া যে, তোমরা চিরস্থায়ী হইবে। এবং যখন তোমরা আঘাত হান তখন আঘাত হানিয়া থাক কঠোরভাবে। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। ভয় কর তাহাকে যিনি তোমাদিগকে দিয়াছেন সেই সমুদয় যাহা তোমরা জান। তিনি তোমাদিগকে দিয়াছেন আনআম ও সন্তান-সন্তুতি, উদ্যান ও প্রস্রবণ। আমি তোমাদিগের জন্য আশংকা করি মহাদিবসের শাস্তির। উহারা বলিল, তুমি উপদেশ দাও অথবা না-ই দাও, উভয়ই আমাদিগের জন্য সমান। ইহা তো পূর্ববর্তীদিগেরই স্বভাব। আমরা শাস্তিপ্রাপ্তদিগের শামিল নহি। অতঃপর উহারা তাহাকে প্রত্যাখ্যান করিল এবং আমি উহাদিগকে ধ্বংস করিলাম। ইহাতে অবশ্যই আছে নিদর্শন; কিন্তু উহাদিগের অধিকাংশই মুমিন নহে। এবং তোমার প্রতিপালক, তিনি তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু” (২৬ ১২৩-১৪০)।

“আর আদ সম্প্রদায়ের ব্যাপার এই যে, উহারা পৃথিবীতে অযথা দম্ভ করিত এবং বলিত, আমাদিগের অপেক্ষা শক্তিশালী কে আছে : উহারা কি তবে লক্ষ্য করে নাই যে, আল্লাহ যিনি উহাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছেন, তিনি উহাদিগের অপেক্ষা শক্তিশালী? অথচ উহারা আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করিত। অতঃপর আমি উহাদিগকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাইবার জন্য উহাদিগের বিরুদ্ধে প্রেরণ করিয়াছিলাম ঝঞ্ঝাবায়ু অশুভ দিনে। আখিরাতের শাস্তি তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং উহাদিগকে সাহায্য করা হইবে না” (৪১ : ১৫-১৬)।

“স্মরণ কর আদ সম্প্রদায়ের ভ্রাতার কথা, যাহার পূর্বে এবং পরেও সতর্ককারীরা আসিয়াছিল। সে তাহার আহকাফবাসী সম্প্রদায়কে সতর্ক করিয়াছিল এই বলিয়া, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কাহারও ইবাদত করিও না। আমি তোমাদিগের জন্য মহাদিবসের শাস্তি আশংকা করিতেছি। উহারা বলিয়াছিল, তুমি আমাদিগকে আমাদিগের দেব-দেবীগুলির পূজা হইতে নিবৃত্ত করিতে আসিয়াছ? তুমি সত্যবাদী হইলে আমাদিগকে যাহার ভয় দেখাইতেছ তাহা আনয়ন কর। সে বলিল, ইহার জ্ঞান তো কেবল আল্লাহরই নিকট আছে। আমি যাহা লইয়া প্রেরিত হইয়াছি কেবল তাহাই তোমাদিগের নিকট প্রচার করি। কিন্তু আমি দেখিতেছি, তোমরা এক মূঢ় সম্প্রদায় । অতঃপর যখন তাহারা উহাদিগের উপত্যকার দিকে মেঘ আসিতে দেখিল তখন বলিতে লাগিল, উহা তো মেঘ, আমাদিগকে বৃষ্টি দান করিবে। হূদ বলিল, ইহাই তো তাহা, যাহা তোমরা ত্বরান্বিত করিতে চাহিয়াছ, এক ঝড়, মর্মন্তুদ শাস্তি বহনকারী। আল্লাহর নির্দেশে ইহা সমস্ত কিছুকে ধ্বংস করিয়া দিবে। অতঃপর উহাদিগের পরিণাম এই হইল যে, উহাদিগের বসতিগুলি ছাড়া আর কিছুই রহিল না। এইভাবে আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়া থাকি। আমি উহাদিগকে যে প্রতিষ্ঠা দিয়াছিলাম তোমাদিগকে তাহা দেই নাই। আমি উহাদিগকে দিয়াছিলাম কর্ণ, চক্ষু ও হূদয়; কিন্তু এইগুলি উহাদিগের কোন কাজে আসে নাই। কেননা উহারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করিয়াছিল। যাহা লইয়া উহারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করিত উহাই উহাদিগকে পরিবেষ্টন করিল” (৪৬ ও ২১-২৬)।

“এবং নিদর্শন রহিয়াছে আদের ঘটনায়, যখন আমি তাহাদিগের বিরুদ্ধে প্রেরণ করিয়াছিলাম অকল্যাণকর বায়ু। ইহা যাহা কিছুর উপর দিয়া প্রবাহিত হইয়া গিয়াছিল তাহাকেই চূর্ণ-বিচূর্ণ করিয়া দিয়াছিল” (৫১ : ৪১-২)।

“আদ সম্প্রদায় সত্য প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল, ফলে কী কঠোর হইয়াছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী! উহাদিগের উপর আমি প্রেরণ করিয়াছিলাম ঝঞ্ঝাবায়ু নিরবচ্ছিন্ন দুর্ভাগ্যের দিনে, মানুষকে উহা উৎখাত করিয়াছিল উম্মলিত খর্জুর কাণ্ডের ন্যায়। কী কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী” (৫৪ : ১৮-২১)।

“আর আদ সম্প্রদায়, উহাদিগকে ধ্বংস করা হইয়াছিল এক প্রচণ্ড ঝঞ্ঝাবায়ু দ্বারা, যাহা তিনি উহাদিগের উপর প্রবাহিত করিয়াছিলেন সপ্ত রাত্রি ও অষ্ট দিবস বিরামহীনভাবে। তখন তুমি উক্ত সম্প্রদায়কে দেখিত- উহারা সেথায় লুটাইয়া পড়িয়া আছে সারশূন্য বিক্ষিপ্ত খর্জুর কাণ্ডের ন্যায়। অতঃপর উহাদিগের কাহাকেও তুমি বিদ্যমান দেখিতে পাও কি” (৬৯ : ৬-৮)?

“তুমি কি দেখ নাই তোমার প্রতিপালক কি করিয়াছিলেন আদ বংশের ইরাম গোত্রের প্রতি, যাহারা অধিকারী ছিল সুউচ্চ প্রাসাদের, যাহার সমতুল্য কোন দেশে নির্মিত হয় নাই” (৮৯ ও ৬-৮)?

হাদীছ শরীফে হযরত হূদ (আ)

হাদীছে হযরত হূদ (আ)-এর বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে কতক হাদীছে হযরত হূদ (আ)-এর উল্লেখ পাওয়া যায় । হযরত আবূ বা সিদ্দীক (রা) এক দিন হযরত রাসূলুল্লাহ (স)-এর কিছু দাড়ি পাকা দেখিলেন এবং বিচলিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি বার্ধক্যে উপনীত হইয়াছেন! রাসূলে পাক (স) বলেন, “হ” সূরা হূদ আমাকে বৃদ্ধ করিয়া দিয়াছে” (মাআরিফুল কুরআন, সংক্ষিপ্ত বাংলা অনু., পৃ. ৬১৯)। এই হাদীছ হইতে বুঝা যায় যে, বিশেষত এই সূরায় হযরত নূহ (আ), হযরত হূদ (আ) ও হযরত সালিহ (আ)-এর দাওয়াতী কার্যক্রমের বর্ণনা এবং তাঁহাদের কওমের নাফরমানির কথা অবগত হইয়া মহানবী (স) বিচলিত হইয়াছিলেন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত হূদ (আ) সর্বপ্রথম আরবী ভাষায় কথা বলেন। ওয়াহ্ ইবন মুনাব্বিহ মনে করেন, হযরত হূদ (আ)-এর পিতা সর্বপ্রথম আরবী ভাষায় কথা বলেন (আবদুল ওয়াহহাব আন্-নাজ্জার, কাসাসুল কুরআন, পৃ. ৪৯; ইবন কাছীর, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ৯৫)।

সহীহ্ ইবন হিব্বানে হযরত আবু যার (রা) বর্ণিত দীর্ঘ হাদীছে নবী ও রাসূলগণের বর্ণনার এক স্থানে নবী করীম (স) বলেন :

“(আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত) নবী-রাসূলগণের মধ্যে ৪জন আরব ছিলেন। হযরত হূদ, হযরত সালিহ, হযরত শুআয়ক এবং তোমার নবী, হে আবু যার” (ইবন কাছীর, কাসাসুল আম্বিয়া, পৃ. ৯৫)! হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছে আদ জাতি ও হযরত হূদ (আ) সম্পর্কে বলা হইয়াছে :

“হযরত আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আদ জাতি ‘সামূদ ও ‘আল-হাতার নামক দুইটি মূর্তির পূজা করিতে শুরু করে। অতঃপর আল্লাহ তাহাদের নিকট হযরত হূদ (আ)-কে নবী হিসাবে প্রেরণ করেন। তিনি খালুদ গোত্রের সন্তান ছিলেন। তিনি বংশের দিক হইতে অভিজাত এবং সুন্দর চেহারাবিশিষ্ট ছিলেন। তাঁহার শরীরের রং সাদা, চিবুক চুলপূর্ণ, দাড়ি লম্বা ছিল। তিনি তাহাদেরকে আল্লাহর ইবাদত করার ও তাহাকে একমাত্র স্রষ্টা হিসাবে মানার জন্য বলেন এবং মানুষের উপর অত্যাচার করা হইতে বিরত থাকিতে বলেন। কিন্তু তাহারা হযরত হূদ (আ)-কে মিথ্যুক বলে এবং গর্ব করিয়া বলে, আমাদের চাইতে শক্তিশালী আর কে আছে (তাফসীরুল মানার, খ. ৭, পৃ. ৪৯৮)!

কওমে হূদ বা আদ জাতির পরিচয়

হযরত হূদ (আ)-কে তাঁহার নিজস্ব কওম আদ-এর হিদায়াতের জন্য আল্লাহ প্রেরণ করেন। হযরত হূদ (আ)-এর জীবন ও কর্মতৎপরতা আদ জাতিকে কেন্দ্র করিয়া আবর্তিত হইয়াছিল । ফলে হযরত হূদ (আ)-এর জীবনী আলোচনা করিতে হইলে আদ জাতি সম্পর্কে সার্বিক আলোচনা আবশ্যক। হযরত আদম (আ)-এর পর অনেক অনেক দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আরবে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সম্পদ ও প্রাচুর্যের অধিকারী এক জাতির আবাদ ছিল, যাহাদেরকে পবিত্র কুরআনে “আদ জাতি বলা হইয়াছে। হযরত নূহ (আ)-এর প্রাবনের পর তাহার পুত্রদের মধ্যে অন্যতম সাম-এর বংশ আরব ও তৎপার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল। আদ জাতি ঐ বংশের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল, যাহাদের বিভিন্ন গোত্রকে url বা ‘সামী জাতিগোষ্ঠী বলা হইত। এই আদ জাতি ইরাম ইবন সাম ইব্‌ন নূহ (আ)–এর বংশের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় এই জাতিকে আদ-ই ইরাম বলা হইত। কুরআনে উল্লিখিত আদ ও ছামূদ জাতিদ্বয়ের বংশতালিকা উপরের দিকে ইরাম-এ গিয়া মিলিত হয়। ফলে ইরাম শব্দটি আদ ও ছামূদ উভয়ের বেলায় প্রযোজ্য।

সায়্যিদ সুলায়মান নদবী আসমানী কিতাব তাওরাত অনুযায়ী বর্ণিত [ ] বংশ পরিবর্তন ছক তাঁহার গ্রন্থে উপস্থাপন করিয়াছেন এবং ঐ ছকে তিনি [ ] জাতিকে [ ] বলিয়া উল্লেখ করেন। অর্থাৎ সেই আদ হযরত হূদ (আ)-এর যমানায় কওমে হ্রদ নামে অভিহিত ছিল এবং হযরত হূদ (আ)-এর পরবর্তী [ ] কে [ ] অর্থাৎ (ছামূদ), (জুরহুম), (মুঈন), (আসাম), (জাদীস) ইত্যাদি নামে উল্লেখ করেন।

দ্বিতীয় সামী জাতিগোষ্ঠী দ্বিতীয় আদ : ছামূদ, জ্বরহুম, মঈন, তাসাম ও জাদীস, সালিহ